পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের রাজ্যের সমস্ত রাজ্যবাসীর উপর অত্যন্ত সহৃদয় এবং মমতাময়ী। এর প্রমাণ তিনি বারবার দিয়েছেন রাজ্যের মানুষের জন্য একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে। স্বাস্থ্য সাথী, সবুজ সাথী থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার ও আরো অনেক জনমুখী প্রকল্প তিনি ইতিমধ্যেই চালু করেছেন। এর মাধ্যমে রাজ্যের কোটি কোটিরও বেশি মানুষ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দারুণ সুবিধা লাভ করে চলেছেন। এবারেও তিনি নিজের এই সহৃদয়তার পরিচয় দিয়েছেন আরও এক প্রশংসনীয় প্রকল্পের সূচনা করার মাধ্যমে। যে প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি ঘোষণা করেছেন যে রাজ্যের প্রতিটি বেকার যুবক-যুবতীকে তিনি গাড়ি কিনে ব্যবসা করার জন্য অর্থ প্রদান করবেন। কারণ তিনি আশা করেন যে তার এই কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীরা বর্তমানে এই বেকারত্বের বাজারে যা হোক কিছু কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে সক্ষম হবে। নতুন চালু করা এই প্রকল্পের নাম মুখ্যমন্ত্রী রেখেছেন ‘গতিধারা’ প্রকল্প। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে এই প্রকল্পের সম্পর্কে সবকিছু জেনে নেওয়া যাক।
২০১১ সালের প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের প্রতিটি কর্মসূচির মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের ভালো মন্দের প্রতি তার চিন্তাকে প্রকাশ করেছেন। প্রতিটি বেকার ছেলেমেয়ের জন্য একের পর এক সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ঘোষণা, বেকারত্ব হ্রাস করার জন্য বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণের সূচনা এবং বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করার মাধ্যমে তিনি বারবার জনগণের মন জয় করে নিয়েছেন। তাই তো পরপর তিন বার তিনি এরাজ্যের সিংহাসনে নিজের স্থান বজায় রেখেছেন। আর আজও এই বিশেষ ধরনের প্রকল্প চালু করে তিনি প্রমাণ করেছেন যে রাজ্যের প্রতিটি মানুষকে স্বনির্ভর করে তোলাই হলো তার প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা:-
বর্তমানে চাকরির বাজারের যেরকম শোচনীয় অবস্থা হয়েছে তাতে রাজ্যের প্রতিটি বেকার যুবক-যুবতির পক্ষে সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক একটা চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার। এই পরিস্থিতিতে মূখ্যমন্ত্রীর এই ‘গতিধারা’ প্রকল্প রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের অনেকটাই সহায়তা করবে বলে মনে করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে এই প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের কোটি কোটি বেকার যুবক-যুবতী উপকৃত হবেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি প্রতিটি আবেদনকারী প্রার্থীদের গাড়ি কেনার জন্য অর্থ প্রদান করবেন। বর্তমানকালে এই ব্যস্ততার জীবনে যাতায়াতের জন্য মানুষের যানবাহনের দরকার তো হয়েই থাকে। তাই এই যানবাহনের মাধ্যমে প্রচুর মানুষের জীবিকা নির্বাহও ঘটে থাকে। বিভিন্ন বেকার ছেলেমেয়েরা খুব সহজেই এই সব যানবাহন ক্রয় করে তার মাধ্যমে ভাড়া খাটিয়ে একটি ভালো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু সে গাড়ি কেনার জন্যও তো অনেক টাকার দরকার। অনেক মানুষের কাছেই তো এত টাকা থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। রাজ্যবাসীর এই অসুবিধা ঘুচিয়ে তাদেরকে জীবনে ভালোভাবে বাঁচার উপায় করে দেওয়ার জন্যই মুখ্যমন্ত্রী এরূপ প্রকল্পের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি মনে করেন যে এর মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি বেকার ছেলে মেয়ে কোন না কোন উপায়ে নিজেদের কাজের ব্যবস্থা নিজেরা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন। এবারে এই প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া, যোগ্যতা ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা:-
এই ‘গতিধারা’ প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে ইচ্ছুক প্রার্থীদের প্রথমে নির্দিষ্ট উপায়ে এখানে আবেদন করতে হবে। তবে এখানে আবেদনের জন্য প্রার্থীদের বেশ কিছু আবশ্যিক যোগ্যতা থাকার কথা বলা হয়েছে। যেমন,
১. আবেদনকারী প্রার্থীকে অবশ্যই এই রাজ্য অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের একজন স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
২. এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক আবেদনকারী প্রার্থীর এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা হবে। প্রার্থীদের যদি এই সুবিধা পাওয়ার একান্তই দরকার থাকে তবেই সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সাহায্য করা হবে।
৩. এই প্রকল্পে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রার্থীর পারিবারিক আয় মাসে ২৫ হাজার টাকার কম হতে হবে।
৪. আবেদনকারী প্রার্থীকে রাজ্য সরকারের এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে (EMPLOYMENT BANK) – নাম অবশ্যই নথি ভুক্ত থাকতে হবে ।
৫. ক্রয় করা গাড়ির রুট পারমিটের ক্ষেত্রে রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস (RTO) এবং স্টেট ট্রান্সপোর্ট অথরিটি অফিসে (STA) যোগাযোগ করতে হবে।
৬. এক্ষেত্রে আবেদনকারী প্রার্থীদের বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে । তবে তপশিলি জাতি- উপজাতিরা ৫ এবং ওবিসি প্রার্থীরা ৩ বছরের বয়সের ছাড় পাবেন ।
আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র সমূহ:-
এখানে আবেদন করার সময় প্রার্থীদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সঙ্গে রাখা আবশ্যক। এগুলি হল,
১. আবেদনকারী দু কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ফটো।
২. আবেদনকারী নিজস্ব ভোটার কার্ডের ও আধার কার্ডের জেরক্স।
৩. প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণসমূহ।
৪. প্রার্থী যে এলাকার বসবাসকারী সেই এলাকার পঞ্চায়েত বা মিউনিসিপালিটি প্রদত্ত একটি স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণপত্র।
৫. বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা আধার কার্ড বা বার্থ সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
৬. একটি ইনকাম সার্টিফিকেট যেটিতে প্রার্থীর পারিবারিক বার্ষিক আয় উল্লেখ থাকবে।
৮. এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের কার্ড।
আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি:-
উপরোক্ত এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য প্রার্থীদের নির্দিষ্ট আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যে এক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার কোন সুবিধা নেই। অর্থাৎ যে সমস্ত প্রার্থীরা এখানে আবেদন করতে ইচ্ছুক এবং উপযুক্ত তাদেরকে অফলাইনে এই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এর জন্য প্রার্থীরা তাদের নিজস্ব এলাকার মিউনিসিপ্যালিটি বা পঞ্চায়েতের কাছে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এবং তাদের এলাকায় যদি এই প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা শুরু হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এখানে আবেদন জানাতে পারেন। এজন্য সেই পঞ্চায়েতের বা মিউনিসিপালিটির তরফ থেকে প্রথমে একটি আবেদন পত্র দেওয়া হবে। সেই আবেদনপত্র ভালোভাবে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করে তার সঙ্গে সকল দরকারি নথিপত্র একত্রিত করে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে। এরপরই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
আবেদন করার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা:-
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পের সম্পর্কে কোন অফিশিয়াল নোটিফিকেশন এখনো পর্যন্ত জারি করা হয়নি। এ বিষয়ে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা শোনা গেছে। বিশেষ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে যে খুব শীঘ্রই সারা রাজ্য জুড়ে এর জন্য আবেদন প্রক্রিয়া আয়োজিত হবে। সুতরাং এখানে সুবিধা পাওয়ার জন্য যে আবেদন পদ্ধতি তা শুরু বা শেষ হওয়ার কোন নির্দিষ্ট তারিখ এখনো পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। এই বিষয়ে খবর পাওয়া মাত্রই তা চ্যানেলের তরফ থেকে প্রকাশ করা হবে। এর জন্য ইচ্ছুক প্রার্থীদের অনুরোধ করা হচ্ছে তারা যেন নিয়মিতভাবে আমাদের চ্যানেলটি অধিক আপডেটের জন্য ফলো করেন।