এবার ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে আয়ুষ্মান কার্ডের জন্য আবেদন করুন, কিভাবে করবেন দেখে নিন।
আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত এমন বহু মানুষ বসবাস করছেন যারা আর্থিক দুরাবস্থার কারনে নিজেদের চিকিৎসা করাতে পারেন না। ফলে তাদের মধ্যে অনেককেই বিনা চিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারাতে হয়। এই কথা মাথায় রেখেই আমাদের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েই বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা চালু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের কাছে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু বছর আগেই চালু করেছেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। আর ঠিক সেই ভাবেই সারা ভারতের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা যাতে বিনামূল্যে সঠিক চিকিৎসা সুবিধা পান তা সুনিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী PM জন আরোগ্য যোজনা চালু করেছেন।
এই যোজনার আওতায় থাকা উপভোক্তাদের পরিবার পিছু একটি করে কার্ড দেওয়া হয়। যে কার্ড টির নাম হল আয়ুষ্মান কার্ড। এই কার্ডের মাধ্যমে তারা সারা দেশের যে কোনো জায়গার যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসালয়ে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা পেয়ে থাকেন। যার ফলে তারা নিজেদের ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারেন।
এই আয়ুষ্মান কার্ডের জন্য আবেদন করতে এখন থেকে আপনাকে আর বাইরে কোথাও যেতে হবে না। এখন থেকে ঘরে বসে খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে আপনি আয়ুষ্মান কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর আপনার আবেদন পদ্ধতিতে যদি কোনো রকম কোনো ভুল না থাকে তাহলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনার আবেদন অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে যাবে অর্থাৎ আবেদন করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনি আপনার কার্ড পেয়ে যাবেন। চলুন এবারে জেনে নেওয়া যাক এই কার্ড পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে, এর কার্ড থাকলে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে, এই কার্ডের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হবে।
আয়ুষ্মান কার্ড পেতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে?
আয়ুষ্মান কার্ড কেবলমাত্র সেই সকল মানুষদেরই দেওয়া হবে যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন। কেবলমাত্র বি পি এল কার্ড হোল্ডার রাই এই কার্ডের সুবিধা পাবেন। যে সকল পরিবারের মাসিক আয় অত্যন্ত কম কেবলমাত্র তারাই এই কার্ডের সুবিধা লাভ করতে পারবেন বাকিরা নন।
আয়ুষ্মান কার্ড থাকলে কোন কোন সুবিধা গুলি পাওয়া যাবে?
আয়ুষ্মান কার্ড থাকলে নিম্নলিখিত সুবিধা গুলি পাওয়া যাবে। যেমন-
১) আয়ুষ্মান ভারতের তালিকায় থাকা যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হসপিটালে এই কার্ড থাকলে তার মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে।
২) এই স্কিমের আওতায় সাম্প্রতিককালে ক্যান্সার, কার্ডিওলজি, অপারেশন, মেডিসিন ইত্যাদির মতো মোট ১,৯৪৯ ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
৩) হসপিটালে ভর্তি থাকা কালীন সেখানকার যাবতীয় খরচ, হসপিটাল থেকে ছুটি পাওয়ার পর ১৫ দিনের ওষুধ, হসপিটালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন আগের যাবতীয় পরীক্ষা নীরিক্ষার সুবিধা, খাবার দাবার খরচ এমনকি থাকার সুবিধাও এই কার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
৪) এছাড়াও বর্তমানে আলঝেইমার, ডিমেনশিয়ার এর মতো মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হলেও এই কার্ডের সুবিধা পাওয়া যায়।
আয়ুষ্মান কার্ড পাওয়ার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে আবেদন করতে হবে?
আয়ুষ্মান কার্ড পাওয়ার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ অনুযায়ী। যেমন-
১) সবার আগে PM জন আরোগ্য যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://pmjay.gov.in/ এ প্রবেশ করতে হবে।
২) তারপর যে উইন্ডো আসবে সেখানে Am I Eligible অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৩) এরপর যে নতুন উইন্ডো ওপেন হবে সেখানে নিজের মোবাইল নাম্বার দিলে একটি OTP আসবে। এই OTP টি বসিয়ে মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করতে হবে।
৪) এরপর লগইন করতে হবে এবং সার্চ ফর বেনিফিশিয়ারি অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৫) এরপর আপনি যে রাজ্যের নাগরিক সেই রাজ্যটি নির্বাচন করতে হবে এবং স্কিম নেম এর জায়গায় স্কিমের নাম অর্থাৎ PMJAY লিখতে হবে।
৬) এরপর আপনি কোন ক্যাটাগরির রেশন কার্ড হোল্ডার তা প্রমাণ করতে আপনার রেশন কার্ডের যাবতীয় তথ্য বসিয়ে একটি ফর্ম ফিলাপ করতে হবে।
৭) এরপর আপনি যে ব্যাক্তির নামে আয়ুষ্মান যোজনার কার্ড করাবেন সেই ব্যাক্তির নাম নির্বাচন করতে হবে এবং তার সম্পর্কে দেওয়া যাবতীয় তথ্য যাচাই করে দেখে নিতে হবে।
৮) এরপর আধার অপশনে ক্লিক করতে হবে এবং OTP এর মাধ্যমে আধার কার্ড ভেরিফাই করতে হবে।
৯) OTP ভেরিফিকেশন এর পরে একটি নতুন উইন্ডো ওপেন হবে সেখানে Apply Now অপশনে ক্লিক করে আয়ুষ্মান কার্ড করানোর জন্য আবেদন করতে হবে।
১০) আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পর যে নতুন উইন্ডো ওপেন হবে সেখান থেকে ই- কে ওয়াই সি অপশন টি সিলেক্ট করতে হবে।
১১) ই – কে ওয়াই সি জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে আধার নম্বর ও আধার নম্বরের সাথে যে মোবাইল নাম্বারটা লিঙ্ক করা আছে সেটি বসাতে হবে।
১২) ই -কে ওয়াই সি সম্পূর্ণ হওয়ার পর যার নামে আয়ুষ্মান কার্ড এর জন্য আবেদন করছেন তার এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ফটো স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
১৩) এরপর সেই ব্যাক্তির সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য যেমন সেই ব্যাক্তির নাম, মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা ইত্যাদি দিয়ে আবেদন পত্র পূরণ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করলেই আবেদন হয়ে যাবে।
আর আবেদন প্রক্রিয়াতে যদি কোনো রকম কোনো ভুল ভ্রান্তি না থাকে তাহলে আবেদন করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনার আয়ুষ্মান কার্ড অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে যাবে।