আবারো রাজ্যে প্রবল বৃষ্টির সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের তরফ থেকে। রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে তেমন বৃষ্টি দেখা যায় নি, এর ফলে কৃষকদের প্রবল সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অবশেষে রাজ্যের সমগ্র জেলায় প্রবল বৃষ্ট ও বজ্রপাতের সতর্কবার্তা জানানো হলো।
পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়ায় ফের বড় পরিবর্তন। বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো হাওয়ার সতর্কতা জারি হয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে আপাতত বৃষ্টির প্রবণতা কম থাকলেও, নির্দিষ্ট কিছু জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্যজীবীদের জন্য উপকূলে সমুদ্রযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে মেঘলা আকাশ ও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি
দক্ষিণবঙ্গে সোমবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে প্রায় সব জেলায়। তবে সবচেয়ে বেশি সতর্কতা জারি হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলার জন্য। এইসব জেলায় বন্যার প্রকোপ তৈরি হয়েছে।
ভারী বৃষ্টির সতর্কতাযুক্ত জেলা:
পশ্চিমবঙ্গের যে সমস্ত জেলায় সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে সেই জেলাগুলি হলো –
- বাঁকুড়া
- পুরুলিয়া
- পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর
- ঝাড়গ্রাম
- দক্ষিণ ২৪ পরগনা
- হাওড়া
- হুগলি
এইসব জেলায় ৩০ থেকে ৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা নেই, তবে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি চলতে পারে। বৃষ্টিপাতের তীব্রতা অনেক বেশি থাকবে এইসমস্ত জেলায়।
উত্তরবঙ্গে আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, তবে কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
উত্তরবঙ্গে সোমবার বৃষ্টির সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম। তবে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিছু জেলায় বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাযুক্ত জেলা:
- দার্জিলিং
- কালিম্পং
- কোচবিহার
- জলপাইগুড়ি
- আলিপুরদুয়ার
অন্যদিকে, মালদা সহ দক্ষিণবঙ্গ সংলগ্ন উত্তর জেলার কিছু অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: প্রভাব দক্ষিণবঙ্গে বেশি
পশ্চিমবঙ্গের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ। গত ৬ ঘণ্টায় এই নিম্নচাপ নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং অভিমুখ এখন ছত্তীসগঢ় ও ঝাড়খণ্ডের দিকে।
নিম্নচাপের প্রভাবে কী কী ঘটছে:
- দক্ষিণবঙ্গে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
- উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্র উত্তাল থাকবে।
- দমকা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে ৩০–৪০ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগে।
- বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির আশঙ্কা সব জেলাতেই।
সমুদ্র উত্তাল: মৎস্যজীবীদের সতর্কতা
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। এই পরিস্থিতিতে উপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবীদের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ।
যেসব এলাকায় সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ:
- দীঘা
- মন্দারমণি
- নামখানা
- ফ্রেজারগঞ্জ
- কাকদ্বীপ
- হালদিয়া
সরকারি দপ্তরের তরফে মৎস্যজীবীদের উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশ জারি হয়েছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকবে।
আগামী সপ্তাহে আবহাওয়ার পরিবর্তন: কবে থেকে বৃষ্টি কমবে?
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী:
- মঙ্গলবার বিকেল থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা ধীরে ধীরে উঠিয়ে নেওয়া হবে।
- বুধবার ও বৃহস্পতিবার, রাজ্যের অধিকাংশ জেলায় বৃষ্টির মাত্রা কমবে।
- দক্ষিণবঙ্গের কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও, আগের মতো ভারী বৃষ্টি আর হবে না।
সাধারণ মানুষের জন্য সতর্কতা
আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের মধ্যে সাধারণ মানুষকে কিছু সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন ও আবহাওয়া দপ্তর:
- বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সময় গাছের নিচে বা খোলা জায়গায় দাঁড়ানো এড়িয়ে চলুন।
- ঘরে থাকুন যতটা সম্ভব, বিশেষত উপকূল ও পশ্চিমাঞ্চলে।
- বৃষ্টির মধ্যে বাইকে বা গাড়ি চালালে সতর্ক থাকুন।
- মোবাইলে ওয়েদার অ্যাপের মাধ্যমে আপডেট রাখুন।
রাজ্যের আবহাওয়ার বর্তমান চিত্র বেশ জটিল। একদিকে দক্ষিণবঙ্গের উপকূল এবং পশ্চিমাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা, অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে তুলনামূলকভাবে আবহাওয়া শান্ত। তবে নিম্নচাপের প্রভাবে রাজ্যের সামগ্রিক আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
মৎস্যজীবীদের সমুদ্রযাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ ছাড়াও, সাধারণ মানুষকেও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সতর্ক থাকতে হবে। বৃষ্টির হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে। তবে এই মুহূর্তে আবহাওয়ার সতর্কতাই সবচেয়ে জরুরি।