Krishak Bandhu 2025: পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে ১০,০০০ টাকা, মুখ্যমন্ত্রীর বড় ঘোষণা

আবারো পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের জন্য বিশাল সুখবর। পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের জন্য নতুন করে আবারো আসছে আর্থিক স্বস্তির খবরে ভরা বিরাট বড় ঘোষণা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খরিফ মরশুমকে সামনে রেখে আবারো রাজ্যের কৃষকদের জন্য নতুন করে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের নতুন কিস্তির টাকা বিতরণ শুরু করেছেন। জানানো হয়েছে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১০ হাজার টাকা জমা পড়ছে, যা রাজ্যের লক্ষ লক্ষ কৃষকের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। এর ফলে বছরের মোটা টাকা জমা পড়ছে ব্যাংক একাউন্টে।

এই প্রকল্প শুধু আর্থিক সহায়তার সীমাবদ্ধ নয়—এটি একদিকে যেমন কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থাকে স্বনির্ভর ও স্থিতিশীল করে তুলছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই জনকল্যাণমুখী উদ্যোগটি প্রথম চালু হয় ২০১৯ সালে। এর পর থেকে লাগাতার চলে আসছে এই প্রকল্পটি। রাজ্যের কৃষক এবং বর্গাদারদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে রাজ্যের কৃষকেরা ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছে। পাঁচ বছরের মাথায় আজ এটি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ডে পরিণত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে, ২০২৫ সালের খরিফ মরশুমের জন্য কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রকল্প অনুযায়ী টাকা জমা পড়া শুরু করেছে। যাদের অ্যাকাউন্টে এখনো টাকা আসেনি তাদের একাউন্টে টাকা চলে আসবে খুব তাড়াতাড়ি।
এই টাকা প্রতিটি কৃষক ও বর্গাদারের জন্য সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা বছরে দুটি কিস্তিতে প্রদান করা হয়—খরিফ ও রবি মরশুমে।

সরকার ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, এবারের কিস্তিতে ২,৯৩০ কোটি টাকা রাজ্যের প্রায় ১ কোটি ৯ লক্ষ কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হয়েছে।

বৈশিষ্ট্য বিবরণ
বার্ষিক অনুদান সর্বোচ্চ ₹১০,০০০ (দুই কিস্তিতে)
ন্যূনতম অনুদান এক একরের কম জমির জন্য ₹৪,০০০ পর্যন্ত
কিস্তির সময় খরিফ ও রবি মরশুমে
টাকা প্রাপ্তির মাধ্যম সরাসরি DBT (ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা)
উপকৃত কৃষকের সংখ্যা ১ কোটি ৯ লক্ষ (২০২৫ সালের তথ্য)
মোট অর্থ বরাদ্দ ₹২,৯৩০ কোটি (খরিফ ২০২৫)

 এই প্রকল্পে কারা লাভবান হবেন?

এই প্রকল্পে উপকৃত হচ্ছেন এমন কৃষকরা হলেন:

  • স্ব-স্বত্ত্বাধিকারী কৃষক (Land-holding farmers)
  • বর্গাদার কৃষক (Sharecroppers)
  • ছোট জমির মালিক (কম একর জমির অধিকারী)
  • মহিলা কৃষক, যারা সরাসরি কৃষিকাজে যুক্ত

সরকার কৃষকদের নাম অনলাইনে নথিভুক্ত করে এবং যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে। এতে কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা মধ্যস্বত্বভোগীর জায়গা নেই।

 কৃষক বন্ধু প্রকল্পের প্রভাব

 চাষাবাদের খরচে সহায়তা

সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ইত্যাদি কৃষির আবশ্যিক উপাদানগুলোর দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে এই আর্থিক সহায়তা প্রতি মরশুমে কৃষকদের জন্য প্রাণদায়ী হয়ে উঠেছে। তাই এর মাধ্যমে কৃষকরা ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছে।

 ঋণ নির্ভরতা কমানো

নিয়মিত আর্থিক সহায়তার ফলে বহু কৃষক স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমিয়েছেন। ফলে গ্রামীণ ঋণচক্র থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর এর ফলে কৃষকেরা কিছুটা বেশি পরিমাণে লাভের মুক দেকছে।

কৃষক বন্ধু প্রকল্প ২০১৯–২০২৫: পরিসংখ্যান ও অগ্রগতি

এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কৃষকদের মধ্যে মোট ২৪,০৮৬ কোটি টাকার বেশি অনুদান বিতরণ করা হয়েছে।

বছর মোট অর্থ বিতরণ উপকৃত কৃষক
২০১৯ ₹৩,০০০+ কোটি ~৫০ লক্ষ
২০২১ ₹৫,৮০০+ কোটি ~৭৫ লক্ষ
২০২৩ ₹৬,৭৫০ কোটি ~৯০ লক্ষ
২০২৫ (খরিফ) ₹২,৯৩০ কোটি ১.০৯ কোটি

 কৃষকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা

কৃষকদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, তাদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে এর মাধ্যমে, jemon- জীবনহানির ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের জন্যও রয়েছে বিশেষ আর্থিক নিরাপত্তা।

মৃত্যুকালীন সহায়তা:

প্রকল্পের আওতায় নথিভুক্ত কৃষকের বয়স ১৮–৬০ বছরের মধ্যে হলে এবং তার মৃত্যু ঘটে, তাহলে তার পরিবারকে এককালীন ₹২ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।

এখনো প্রযন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে ও এই সহায়তার মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৪৬ হাজার কৃষক পরিবার উপকৃত হয়েছে এবং মোট ₹২,৯২০ কোটি টাকা তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষক বন্ধু প্রকল্প আজ আর কাগুজে ঘোষণা নয়, এটি এক বাস্তবিক দৃষ্টান্ত—যা আর্থিক সহায়তার বাইরে গিয়ে মানবিকতার ছোঁয়া দেয়।
এর মাধ্যমে রাজ্যের কৃষকরা শুধু চাষ করছেন না, ভবিষ্যতের স্বপ্নও দেখছেন।

এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেই কৃষি হতে পারে দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা।

Leave a Comment