পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প যে কতটা জনপ্রিয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প রাজ্যের প্রায় ২ কোটি মহিলাকে মাসিক ভাতা দিচ্ছে, যার পরিমাণ সাধারণ শ্রেণির মহিলাদের জন্য ১০০০ টাকা ও তপশিলি জাতির জন্য ১৫০০ টাকা।
কিন্তু এবার বিজেপিও পাল্টা কৌশল নিতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে মহিলাদের জন্য নতুন প্রকল্প ঘোষণা করল বিজেপি — ‘অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার’। এই প্রকল্পে মহিলাদের মাসে ৩০০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে এর ফলে বড়সড় প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার প্রকল্প: কী বলছে বিজেপি নেতৃত্ব?
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেন, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে মহিলাদের জন্য অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার চালু করা হবে। এর মাধ্যমে রাজ্যের প্রত্যেক উপযুক্ত মহিলা পাবে মাসে ৩০০০ টাকা করে ভাতা।”
এই ঘোষণার মাধ্যমে বিজেপি কার্যত তৃণমূলের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সাফল্যকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও জানিয়েছেন, “ভাতা থাকবে কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে। শুধু ভাতা দিয়ে নয়, মহিলাদের স্বনির্ভরতার দিকেও নজর দেবে বিজেপি।”
বর্তমান লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের মূল দিকসমূহ:
| ক্যাটাগরি | বর্তমান ভাতা (মাসিক) |
|---|---|
| সাধারণ শ্রেণির মহিলা | ₹১০০০ |
| তপশিলি জাতির মহিলা | ₹১৫০০ |
উল্লেখযোগ্য বিষয়:
- লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আওতায় ২৫-৬০ বছর বয়সী মহিলারা রয়েছেন।
- নূন্যতম বার্ষিক পারিবারিক আয়: ২ লক্ষ টাকার নিচে।
- শুধুমাত্র রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দারা আবেদন করতে পারেন।
BJP-র অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার প্রকল্পের সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্য:
| দিক | সম্ভাব্য তথ্য |
|---|---|
| মাসিক ভাতা | ₹৩০০০ |
| উপকারভোগী | রাজ্যের উপযুক্ত সমস্ত মহিলা |
| শর্তাবলী | এখনও বিশদ ঘোষণা হয়নি, তবে কর্মসংস্থানমুখী হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে |
বিজেপি নেতৃত্বের কথায় স্পষ্ট, এই ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের দিকেও বিশেষ গুরুত্ব দেবে বিজেপি। সুতরাং ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের সাথে দক্ষতা উন্নয়ন বা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মতো প্রকল্প সংযুক্ত হতে পারে।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বাড়ছে?
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারও লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
👉 সম্ভাব্য হারে বৃদ্ধি:
| ক্যাটাগরি | বর্তমান ভাতা | সম্ভাব্য নতুন ভাতা |
|---|---|---|
| সাধারণ শ্রেণি | ₹১০০০ | ₹১৫০০ |
| তপশিলি জাতি | ₹১৫০০ | ₹১৮০০ |
তবে এই বিষয়ে এখনও সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ভোটের আগে প্রকল্প-রাজনীতি
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে মহিলা ভোটারদের নিয়ে রীতিমতো কৌশল চলছে। বাংলার মহিলারা বরাবরই ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ২০২১ সালের নির্বাচনে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ছিল বড় ফ্যাক্টর, ফলে বিজেপিও এবার মহিলাদের কাছে পৌঁছতে চাইছে নতুন স্কিম নিয়ে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে:
- তৃণমূল চাইছে বিদ্যমান ভাতা বাড়িয়ে মহিলাদের ধরে রাখতে।
- বিজেপি চাইছে নতুন ভাতা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের আকর্ষণ করতে।
পশ্চিমবঙ্গ বনাম অন্যান্য রাজ্য: মহিলাদের ভাতা প্রকল্প
| রাজ্য | প্রকল্পের নাম | ভাতা (মাসিক) |
|---|---|---|
| পশ্চিমবঙ্গ | লক্ষ্মীর ভাণ্ডার | ₹১০০০-₹১৫০০ |
| মধ্যপ্রদেশ | লাডলি বহনা | ₹১০০০ |
| ছত্তিশগড় | মহিলা সম্মান | ₹৭৫০ |
| সম্ভাব্য (WB BJP) | অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার | ₹৩০০০ |
এখনও পর্যন্ত বাংলার বিজেপি-ঘোষিত অন্নপূর্ণা ভাণ্ডারের ভাতা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
কী বলছে সাধারণ মানুষ?
অনেক মহিলা বলছেন:
“৩০০০ টাকা পেলে সংসারে অনেকটা স্বস্তি আসবে।”
“কিন্তু সরকার বদল হলে কী প্রকল্প বন্ধ হবে না?”
এদিকে বিরোধী শিবিরের দাবি — বিজেপির ঘোষণাটি শুধুই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। বাস্তবে কতটা রূপায়ণ হবে, সেটা সময়ই বলবে।
পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের আর্থিক সহায়তা নিয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে টানাটানি তুঙ্গে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের পর এবার বিজেপির অন্নপূর্ণা ভাণ্ডার নতুন চমক হিসেবে হাজির। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে নির্বাচনের ফলাফলের উপর।
পাঠক হিসেবে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে—ভোটের ময়দানে কে বাজিমাত করবে, তৃণমূল না বিজেপি?
